জনাব আলহাজ্ব জোহাক আহম্মেদ মন্ডল। তাঁর জন্ম :আনুমানিক ১৮৯৭/৯৮ সালে, মৃত্যু ১৯৯৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী, রোজ : শুক্রবার। প্রায় ১০০ বছরের অধিক সময় পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। জন্মস্থান :গ্রাম রাণীনগর, ইউনিয়ন ধাইনগর, উপজেলা শিবগঞ্জ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। মরহুম,জনাব আলহাজ্ব জোহাক আহম্মেদ মন্ডল। ছিলেন বিশিষ্ট ধর্মপরায়ন ও প্রচারক, দানবীর, সমাজসেবক ও সংস্কারক, শিক্ষানুরাগী ও পৃষ্ঠপোষক, কর্মবীর। ১৪ নং ধাইনগর ইউনিয়ন এ উচ্চ শিক্ষার সূচনা ও প্রসার তিনি প্রথম করেছিলেন। তাঁর ইচ্ছা অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ও ত্যাগের ফলেই ১৯৪৪ সালে ঐতিহ্যবাহী রানীনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তাঁর আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি দুই শিশু পুত্রের মৃত্যু ঘটেছিল। এর পূর্বে ধাইনগর ইউনিয়ন এ বা আশে পাশে কোন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। যার ফলে এলাকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষা লাভের সুযোগ ছিলনা এবং শিক্ষিতোর হার ও নিম্ন পর্যায়ের ছিল। সেই চুয়াল্লিশ সাল হতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুল থেকে দূর-দূরান্ত হতে লক্ষ লক্ষ ধনী গরিব উভয় পরিবারের ছেলে মেয়ে শিক্ষা অর্জন করে বাংলাদেশ সহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন শাখার কর্মক্ষেত্রে উচ্চ পদে কর্মরত ছিলেন ও আছেন। স্কুল প্রতিষ্ঠা করে তিনি শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি কর্মসংস্থান, মেধাবিকাশ ও নেতৃত্ব দেবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া দিয়েছেন এলাকার একটা স্ট্যান্ডার্ড মান। স্কুল কে কেন্দ্র করে স্কুল সংলগ্ন পাশ্ববর্তী ধাইনগর গ্রাম তথা রানীনগর বাজার এর ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটেছে ও এর পাশে বসবাস কারীদের জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়েছে। জনাব জোহাক মোড়ল ধর্মভীরু ছিলেন। শিক্ষার পাশাপাশি তিনি ইসলাম ধর্ম ও ইসলামি শিক্ষার প্রচার প্রসার করেছিলেন। ১৯৪৫ সালে নিজ বাড়ির সামনে রানীনগর পুরাতন জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।তখন থেকে আজ অবধি প্রতি শুক্রবার প্রায় ২৫০/৩০০ লোক একসাথে জুম্মার নামাজ আদায় করে। তিনি নিজেকে আল্লাহর ও ইসলামের খাদেম বা চাকর মনে করতেন। তাই নিজ হাতে সে মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতেন। মসজিদের ইমাম কে নিজ বাড়িতে জায়গীর রাখতেন।নিজ হাতে কুয়ো হতে ইমামের জন্য গোসলের পানি তুলে রাখতেন। এমনও হয়েছে ইমাম কোন কারনে অসুস্থ্য হলে পরিচর্যা সহ ইমামের কাপড়ও তিনি নিজে ধুয়ে দিয়েছেন। এলাকার শিশুদের কুরআন শিক্ষার জন্য নিজ বাড়ির সামনে মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (এটি এখন বন্দ হয়ে গেছে) তিনি কৃষি অনুরাগী, পশু ও বৃক্ষ প্রেমিক ছিলেন।তাঁর বাড়ির সীমানায় অনেক বৃক্ষ রোপন করেছিলেন। যেগুলো এখনও ফল ও ছায়া দেয়।গাছগুলোর পরিচর্যাও তিনি নিজ হাতে করতেন।গরু ছাগল কবুতর পালন করতেন। তিনি নিজ হাতে তাদের খাওয়াতেন ও পরিচর্যা করতেন।গরুর গোবর নিজ হাতে তুলতেন এবং কেও নাকছিটকালে বা ঘেন্না করলে রাগ করতেন। জনাব জোহাক মোড়ল ছিলেন স্বশিক্ষিত, বুদ্ধিমান ও আধুনিক অগ্রগামী সুদূরপ্রসারী চিন্তা সম্পন্ন ব্যক্তি। তাঁর সময়ে তিনি সমবয়সী বা সমযুগীদের থেকে ছিলেন অনেক এগিয়ে। আমরা এখন যা চিন্তা করছি তিনি ১০০ বছর আগে চিন্তা করেছেন এবং তাঁর সময়ে তিনি প্রথম করছেন বা বলেছেন। তিনি ব্যবসা বানিজ্যের প্রয়োজনে ভারত ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি নাকি প্রায় বলতেন জীবনে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে চাইলে ভারত যেতে হবে এবং সকলকে ভারত ভ্রমণ করতে বলতেন। মরহুম জোহাক মোড়ল নিজে যেটা ভাল মনে করতেন সেটাই করতেন। এক্ষেত্রে কারাও তোয়াক্কা করতেন না। কোন বিষয়ে মনঃক্ষুণ্ন হলে সেখান থেকে চিরকালের জন্য মুখ ফিরিয়ে নিতেন। কারও অনুরোধ শুনতেন না। তিনি শত বাধা বিপত্তি কে পা দিয়ে মাড়িয়ে রানীনগর বি এল উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। লোকমুখে শোনা স্কুলের ইট মাটি কাঠ কখনও নিজ কাঁধেও নিয়েছিলেন। তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠিত স্কুলে শেষ জীবনে ভুলে করেও স্কুলের আঙ্গিনায় পা দেননি বা স্কুলের কোন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি। ১৪ নং ধাইনগর ইউনিয়ন এর ভূমি অফিস একসময় তাঁর বাড়ির আঙ্গিনায় ছিলো। নাককাটিতলায় চলে যাবার পর, অফিসে আর কোনদিন যাননি। তিনি একসময় সাবেক ১ নং ওয়ার্ডের (তখন বর্তমান তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে একটি ওয়ার্ড ছিলো) নির্বাচিত ইউপি সদস্য (মেম্বার) ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কখনও ইউনিয়ন পরিষদ এ জাননি। কর্মবীর জোহাক মোড়ল কে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে তাঁর জন্য এই দু'আ করি, স্কুল মসজিদ মাদ্রাসা'র সুপারিশে বা ওসিলায় মহান আল্লাহু রব্বুল আলামীন যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আমীন! সুম্মা-আমীন।